ইসলামিক গল্পঃ এক বাদশা কে নিয়ে শিক্ষনীয় একটি ইসলামিক গল্প

বাদশা
ইসলামিক গল্পঃ এক বাদশা র একটি বাগান ছিল। বাগানটি ছিল অনেক বড় এবং বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট। বাদশাহ একজন লোককে ডাকলেন। তার হাতে একটি ঝুড়ি দিয়ে বললেন, আমার এই বাগানে যাও এবং ঝুড়ি বোঝাই করে নানা রকম ফলমুল নিয়ে আস। তুমি যদি ঝুঁড়ি ভরে ফল আনতে পার আমি তোমাকে পুরস্কৃত করব।

কিন্তু শর্ত হল, বাগানের যে অংশ তুমি পার হবে সেখানে তুমি আর যেতে পারবে না। লোকটি মনে করলো এটা তো কোন কঠিন কাজ নয়। সে এক দরজা দিয়ে বাগানে প্রবেশ করল। দেখল, গাছে গাছে ফল পেকে আছে। নানা জাতের সুন্দর সুন্দর ফল। কিন্তু এগুলো তার পছন্দ হল না। সে বাগানের সামনের অংশে গেল।

এখানকার ফলগুলো তার কিছুটা পছন্দ হল। কিন্তু সে ভাবল আচ্ছা থাক সামনের অংশে গিয়ে দেখি সেখানে হয়ত আরো উন্নত ফল পাব, সেখান থেকেই ফল নিয়ে ঝুঁড়ি ভরব। সে সামনে এসে পরের অংশে এসে অনেক উন্নত মানের ফল পেল। এখানে এ সে তার মনে হল এখান থেকে কিছু ফল ছিড়ে নেই। কিন্তু পরক্ষণে ভাবতে লাগলো যে সবচেয়ে ভাল ফলই ঝুড়িতে নিবে। তাই সে সামনে এগিয়ে বাগানের সর্বশেষ অংশে প্রবেশ করল। বাদশা

সে এখানে এসে দেখল ফলের কোন চিহ্ন ই নেই। অতএব সে আফসোস করতে লাগল আর বলতে লাগল, হায় আমি যদি বাগানে ঢুকেই ফল সংগ্রহ করতাম তাহলে আমার ঝুড়ি এখন খালি থাকত না। আমি এখন বাদশাকে কি করে মুখ দেখাব। ঝুড়ি সহ বাগানে প্রবেশকারি লোকটির সাথে আমলনামা সহ দুনিয়ার বাগানে প্রবেশকারী তোমাকে তুলনা করা যায়। তোমাকে নেক কাজের ফল ছিঁড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু তুমি প্রতিদিনই ভাব, আগামী কাল থেকে ফল ছেঁড়া আরম্ভ করব। আগামী দিন, আগামী দিন করতে করতে তোমার জীবনে আর আগামী দিন আসবে না।  বাদশা

এভাবেই তুমি শূণ্য হাতে আল্লাহর সামনে হাজির হবে। এজন্য মুফতি তাকি উসমানী (রহঃ) বলেন, জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত হচ্ছে। জীবন কেটে যাচ্ছে জানা নেই বয়স বাকি কত। সুতরাং নেক কাজের বাসনা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে তা করে ফেল। কে জানে কিছুক্ষণ পরে মনের এই আগ্রহ থাকবে কি না? এটাও জানা নাই একটু পর বেঁচে থাকবো কিনা, যদিও বেঁচে থাকি হয়তো দুনিয়ার কোন ব্যস্ততা সামনে এসে পড়বে। বাদশা

অতএব নেক কাজ যখনি করতে মন চায় তখনি করে নাও। জীবন থেকে ফায়দা লুটে নাও। তাই জীবন নামক আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে দেয়া বাগানে বিচরণ কালে আমল নামার বিশেষ ঝুড়িতে যখনই সুযোগ পাওয়া যায় তখনি নেকী নামক ফল দিয়ে প্রথম থেকেই ভরা শুরু করে দাও। পরে সময় পাওয়া যাবে কিনা জানা নাই । আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তা’য়ালা সবাইকে তওফিক দিন। বাদশা

আরো পড়ুন : হারানো মসজিদ : ১৩৭৭ বছর পুরোনো লালমনিরহাটের ‘হারানো’ মসজিদ

হারানো মসজিদ : লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামটি খুবই শান্ত ও শীতল। দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত ফসলের ক্ষেতের সারি। কিছু দূরে দু-একটি আবাসিক বাড়ি। কোলাহল নেই, ভিড় নেই। প্রশ্ন হলো, হাজার বছর আগে কি এই গ্রামে কোনো বসতি ছিল? নাকি মুসলিম সম্প্রদায়ের এখানে আগমন কবে?

হারানো মসজিদ : এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ১৯৮৬ সালে। ইতিহাসের হারানো অধ্যায় লুকিয়ে ছিল সেই প্রত্যন্ত গ্রামের ‘আড়া’তে। স্থানীয়রা আরা বলতে জঙ্গল ও ঝোপঝাড়কে বোঝায়। জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় কিছু প্রাচীন ইট বেরিয়ে এল। মাটি ও ইট অপসারণ করতে গিয়ে মসজিদের ভিত্তি পাওয়া গেছে।

ব্যাপারটা হলো, এ ধরনের পোড়া মাটির স্থাপত্য বাংলাদেশে এর আগেও পাওয়া গেছে। তাহলে বিশেষত্ব কোথায়? কে বা কারা এই মসজিদ নির্মাণ করেছে তা নিয়ে রহস্য। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেই পোড়া মাটির ট্যাবলেটগুলির কার্বন ডেটিং করে নিশ্চিত করেছেন যে সেগুলি 690 খ্রিস্টাব্দ বা 69 হিজরির কাছাকাছি নির্মিত হয়েছিল। মানে এটি এক হাজার ৩৭৭ বছরের পুরনো মসজিদ!

হারানো মসজিদ

মসজিদের চূড়ায় প্রাপ্ত পাথরে স্পষ্ট লেখা ‘লা লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর পূর্বে, হিজরি ৬৯’। খননের ফলে পরবর্তী মসজিদ মেহরাব এবং মসজিদ-সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ ও মিম্বরও পাওয়া গেছে। লেখক নিজের জন্য এই মসজিদের নাম দিয়েছেন ‘হারনো মসজিদ’।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাহাবী হজরত আবু ওয়াক্কাস (রা.) এই অঞ্চল দিয়ে চীনে হিজরত করেন। চীনের এখন বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর তীরে কোয়াংটা শহরে তার নির্মিত মসজিদ ও সমাধি রয়েছে। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল দাবি করেছেন যে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্য বহর সিকিম থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীরে খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে চলে যাওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া এই মসজিদটি হয়তো ছাহাবী আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেছিলেন।

যাইহোক, 690 খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদের নির্মাণ আশ্চর্যজনক নয় কারণ বাংলায় সভ্যতার বিকাশ খ্রিস্টাব্দের 500 বছর আগে হয়েছিল, যা প্রাচীন রোমান, গ্রীক এবং পারস্যের সাথে তুলনীয়। এই মসজিদ নির্মাণের সময় বাংলা খড়গ রাজবংশের শাসনাধীন ছিল; যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন।

ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের উত্থান-পতনে রামদাস গ্রাম জনবসতিহীন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ব্রিটিশরা এই এলাকাটিকে একটি সামরিক ঘাঁটি এবং লালমনিরহাটে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি তৈরি করায় অনেক স্থানীয় লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।ফলে জনবসতিহীন গ্রামের মসজিদের ধ্বংসাবশেষ জঙ্গল ও ঝোপঝাড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণের কাছে এই এলাকাটি ‘মোস্টার আরা’ নামে পরিচিতি পায়, যার অর্থ বনের মসজিদ। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের মাধ্যমে এই নামের তাৎপর্য স্পষ্ট হয়।

মসজিদের ধ্বংসাবশেষ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে তারা একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সপ্তদশ শতাব্দীর সমসাময়িক বাংলা ও আরব স্থাপত্যের রেফারেন্স দিয়ে একটি কাল্পনিক মসজিদের মডেল তৈরি করা হয়েছে।বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নাও থাকতে পারে, তবে ঐতিহাসিক রেফারেন্স রেখে মসজিদের কাল্পনিক রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই মসজিদের নাম ‘হারানো মসজিদ’।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং ‘হারানো মসজিদ কমিটির’ সাথে যুক্ত একাধিক ব্যক্তিদের মতে, ধ্বংস হওয়া মসজিদটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একজন সাহাবী নির্মাণ করেছিলেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *