আরাল সাগর: ৫০ বছরে সমুদ্র কিভাবে শুকিয়ে গেল

আরাল সাগর
আরাল সাগর – একটি ‘সমুদ্র’ নাম। কেউ কেউ হয়তো নাম শুনেছেন, কিন্তু কারো কাছে  শুধুই স্মৃতি! কারণ বিশাল সেচ প্রকল্পের কারণে মাত্র ৫০ বছরে এই সমুদ্র বিলীন হয়ে গেছে।

 

আরাল নামের সাথে সাগর শব্দটি যুক্ত হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ ছিল। এটি উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তানে অবস্থিত। আয়তনের কারণে হ্রদটি আরবদের কাছে সমুদ্র নামে পরিচিত ছিল। ভৌগলিকভাবে আরাল এখনও একটি সমুদ্র। কিন্তু বিলুপ্ত সাগর। এখন আরাল সাগর একটি ছোট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বলছে, ২০১০ সাল নাগাদ সাগর শুকিয়ে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নাসার আর্থ অবজারভেটরি ইতিমধ্যেই আরাল সাগরের অন্তর্ধানের বিস্তারিত বিশ্লেষণ পোস্ট করেছে।

এটি জানা যায় যে আরাল সাগরের ইতিহাসে সর্বাধিক 5.5 বছর। 1960 এর আগে সাগর বুকের কাছে একটি হ্রদ ছিল। এর ক্ষেত্রফল ছিল ৬৮ হাজার বর্গ প্রশ্ন। এই সাগরের জল কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উত্তর থেকে সির দরিয়া এবং দক্ষিণ থেকে আমু দরিয়া থেকে মিট আরালের বুকে পানি এসেছে।

আরাল সাগর

1960-এর দশকে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে আমু এবং স্যার দরিয়ার পানি তুলা ক্ষেতে সেচের জন্য ব্যবহার করা হবে। 1954 সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন কারাকুম খাল খনন করে। যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৩৭৫ কিমি। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম সেচ খাল। এই খালের মাধ্যমেই আমু ও স্যার দরিয়ার পানি কারাকুম মরুভূমির মধ্য দিয়ে তুলক্ষেতে প্রবাহিত হতো। দীর্ঘ এই রুটে ৩০ শতাংশ পানি অপচয় হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময় আরও বিভিন্ন বাঁধ ও খাল খনন করা হয়। যার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয় গতিপথ।

পানির স্তর কমলে হ্রদের পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে হ্রদের সব মাছ মারা যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় কৃষিকাজও। আরাল সাগরের ধ্বংস এখানেই শুরু হয়।

1990-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। আরাল সাগরের তীরে কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তান দুটি স্বাধীন দেশ। হ্রদের কিছু অংশ বাঁচাতে শেষ খাদ প্রচেষ্টা হিসেবে কাজাখস্তান আরাল সাগরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু জলাধারটিকে তার গৌরব ফিরিয়ে আনা এখন প্রায় অসম্ভব।

আরো পড়ুন : ৩০০ বছরের পুরোনো অভিশাপে মোড়া মানবশূন্য এই দ্বীপ, লুকানো আছে গুপ্তধনও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *